কোনো প্রজাতির প্রকৃতিতে অস্তিত্ব,অতিশীঘ্র এর বিলুপ্তির সম্ভাবনা আছে কি না ইত্যাদি মূলত প্রজাতির কনজারভেশন স্ট্যাটাস বা সংরক্ষণ অবস্থা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ কোনো প্রজাতি এখনও প্রকৃতিতে রয়েছে কি না, এর বিলুপ্তির সম্ভাবনা কতটা ইত্যাদি কনজারভেশন স্ট্যাটাস থেকে জানা যায়। সাধারণ ভাষায় কনজারভেশন স্ট্যাটাস হলো প্রজাতির ঝুঁকি পরিমাপের মাপকাঠি। প্রজাতির কনজারভেশন স্ট্যাটাস কেবল মাত্র এর সংখ্যা দ্বারা নির্ধারিত হয় না। বরং একটি প্রজাতির সংখ্যা কতটা কমেছে বা বৃদ্ধি পেয়েছে, এর জন্মহার এবং প্রকৃতিতে এর শত্রু সংখ্যাসহ নানা কিছু বিবেচনায় কনজারভেশন স্ট্যাটাস নির্ধারণ করা হয়।

International Union for Conservation of Nature (IUCN) নানাকিছু বিবেচনায় যেসব প্রজাতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে কিংবা বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় তাদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে এবং একটি লাল তালিকা বা রেড লিস্ট প্রকাশ করে। ট্যাক্সন অনুসারে প্রাণিদের ভাগ করা হয়। উল্লেখ্য, শ্রেণিবিন্যাসের একককে ট্যাক্সন বলে (পর্ব, শ্রেণি, বর্গ ইত্যাদি)। রেড লিস্টে প্রাণিদের মূলত কিছু মানদন্ডের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। বিশ্বব্যাপী সর্বনিম্ন উদ্বেগপূর্ণ (যারা মূলত ঝুঁকিতে নেই ) থেকে বিলুপ্ত প্রাণি পর্যন্ত প্রায় নয়টি শ্রেণিতে প্রাণিদের ভাগ করা হয়েছে। আমাদের যেসব প্রজাতির রক্ষা সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত তা আমরা রেড লিস্ট থেকে জানতে পারি। আমাদের সেসব প্রজাতি রক্ষার্থে করণীয় জানতে পারি।

তবে বৈশ্বিক মানদন্ডে করা রেড লিস্ট এলাকাভিত্তিক বা দেশভিত্তিক করা রেড লিস্টের সাথে পুরোপুরি একই না। যেমন হতেই পারে একটি প্রাণি বৈশ্বিকভাবে ঝুঁকিতে নেই কিন্তু একটি নির্দিষ্ট এলাকায় প্রাণিটির অবস্থা সংকটাপন্ন। আবার বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে। কোনো প্রাণি নির্দিষ্ট এলাকায় ঝুঁকিতে না থাকলেও বা বৈশ্বিকভাবে প্রাণিটি সঙ্কটাপন্ন হতে পারে। তাই বৈশ্বিক মানদন্ডে করা শ্রেণিবিভাগ কোনো এলাকাভিত্তিক শ্রেণিবিভাগের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।

বৈশ্বিক মানদন্ডের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রজাতিকে দশটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা সম্ভব।

এগুলো হলো :

  1. Extinct (EX) : প্রকৃতিতে যেসব প্রজাতির কোনো জীবিত প্রাণি বর্তমানে নেই।
  1. Extinct in the wild (EW) : যেসব প্রজাতিকে হয়তো বন্দী অবস্থায় কেবল সংরক্ষণ করা হয়েছে। এসব প্রাণিকে প্রকৃতিতে তাদের সাধারণ বাসস্থানে পাওয়া যায় না। 
  1. Critically endangered (CR) : যেসব প্রাণির বিলুপ্তির সম্ভাবনা অনেক বেশি।
  1. Endangered (E) : যেসব প্রাণির বিলুপ্তির সম্ভাবনা অনেক বেশি।
  1. Vulnerable (V) : যেসব প্রাণির বিলুপ্তির সম্ভাবনা অনেক বেশি।
  1. Near threatened (NT)  : নিকট ভবিষ্যতে যেসব প্রাণির অস্তিত্ব বিপন্ন হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
  1. Conservation Dependent (CD) – ঝুঁকি কম; প্রায় হুমকির সম্মুখীন হওয়া প্রতিরোধ করার জন্য সংরক্ষণ করা হয়, কিছু বিপর্যয় এদেরকে উচ্চ ঝুঁকির স্তরে নিয়ে যেতে পারে।
  1. Least concern (LC) : খুব কম ঝুঁকিতে রয়েছে।
  1. Data deficient (DD) : ঝুঁকি পরিমাপের জন্য যথেষ্ট তথ্য নেই।
  1. Not evaluated (NE) : ঝুঁকি পরিমাপ করা হয়নি।

তবে বাংলাদেশের মানদন্ড অনুযায়ী আরও দুটি শ্রেণি Regionally Extinct (RE) এবং Not Applicable যুক্ত করা হয়েছে। তবে আমাদের মূল চিন্তা বিশেষত বিপন্ন বা ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতিদের নিয়ে। সেক্ষেত্রে Critically endangered (CR), Endangered (E) এবং Vulnerable (V) শ্রেণি নিয়ে আমাদের সচেতন এবং কার্যকর হওয়া উচিত।