পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অব্দি বিবর্তনের ধারায় নানান রকম জীবের উদ্ভব যেমন হয়েছে, অনেক জীবের বিলুপ্তিও ঘটেছে। এত প্রজাতির উদ্ভব এবং বিকাশ এককভাবে জানা এবং বোঝা অসম্ভব। তাই জীবসমুহকে তাদের বিকাশে উপর ভিত্তি করে শ্রেণিতে বিভক্ত করার চেষ্টা করে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে একটি প্রজাতির উদ্ভব এবং বিকাশের পরিপূর্ণ চিত্র দেখা যায়। এছাড়াও জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণের জন্যে শ্রেণিবিন্যাস অপরিহার্য। শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি থেকেই জীববিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা বা ট্যাক্সোনমির সূচনা। আধুনিক শ্রেণিবিন্যাসের জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস পুরো জীবজগতকে দুইটি রাজ্য বা কিংডমে বিভক্ত করেন, উদ্ভিদ এবং প্রাণি। পরবর্তীতে কোষ সংখ্যা, জিনোম ইত্যাদি বিবেচনার আওতায় এনে শ্রেণিবিন্যাসের আরও কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।

শ্রেণিবন্যাস ধাপে ধাপে করা হয়। শ্রেণিবিন্যাসের ধাপগুলোকে ট্যাক্সন (বহুবচনে ট্যাক্সা) বলা হয়। নেস্টেড হায়ারার্কি অনুসরণ করে শ্রেণিবিন্যাসের ধাপগুলো সাজানো হয়। অর্থাৎ, সবচেয়ে উপরের ধাপকে একটি সেট হিসেবে ধরা হলে পরের ধাপটি সেই সেটের একটি উপসেট হয়। একটি সেটের বৈশিষ্ট্য কম থাকায় জীব সংখ্যা বেশি। উপসেটে বৈশিষ্ট্য এবং নির্দিষ্টতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাণির সংখ্যা কমে যায়। এভাবে আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে সাতটি ধাপে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। এর সর্বশেষ ধাপ প্রজাতি যা একটি মাত্র জীবের অন্যন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। শ্রেণিবিন্যাসের ধাপগুলো হলো- রাজ্য (Kingdom), পর্ব (Phylum), শ্রেণি (Class), বর্গ (Order), গোত্র (Family), গণ (Genus), প্রজাতি (Species)। প্রাণিজগত নিয়ে আলোচনাকালে পুরো প্রাণিজগতকে মেরুদন্ডী এবং অমেরুদন্ডী এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। জীবনের যেকোনো পর্যায়ে প্রাণির নটোকর্ড থাকলে তাকে মেরুদন্ডী প্রাণি(vertebrates) বলা হয়। যেসব প্রাণির নটোকর্ড থাকে না তাদের অমেরুদন্ডী প্রাণি (Invertebrates) বলা হয়।

পৃথিবীতে আবিষ্কৃত প্রাণির শতকরা ৮০ ভাগ অমেরুদন্ডী প্রাণি। আমাদের চারপাশে মাকড়সা, শামুক, ফড়িং, প্রজাপতি থেকে শুরু করে অসংখ্য প্রজাতির অমেরুদন্ডী প্রাণি রয়েছে। অমেরুদন্ডী প্রাণি পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রে সামগ্রিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাস্তুতন্ত্রের নানান স্তরে এদের ভূমিকা থাকায়, মানুষ অমেরুদন্ডী প্রাণির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মানুষ যেমন মধুর জন্যে মৌমাছির ওপর নির্ভরশীল, তেমনি মৌমাছি পরাগায়ণের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। তবে বেশিরভাগ সময়ই অমেরুদন্ডী প্রাণিদের ব্যাপারে আমাদের জানার পরিধি কম থাকায় আমরা তাদের রক্ষার্থে সচেতন হই না। প্রাণিজগতের সংখ্যাগুরু দলকে উপেক্ষা করে বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা অসম্ভব। তাই আমাদের অমেরুদন্ডী প্রাণিদের ব্যাপারে জানতে এবং তাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে সচেতন হতে হবে।

প্রজাপতি (Butterflies)

প্রজাপতি Arthropoda পর্বের Lepidoptera বর্গের প্রাণি। Lepidoptera দ্বারা আঁশযুক্ত ডানা বোঝানো হয়। প্রজাপতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ডানা, যা বেশিরভাগ সময় রঙিন হয়। এছাড়াও এদের বৃহৎ শুঁড় (proboscis) যা দ্বারা এরা মধু সংগ্রহ পান করে। প্রজাপতি ডিম পাড়ে যা লার্ভায় (caterpillers) পরিণত হয়। এদের লার্ভার আকৃতি লম্বাটে সিলিন্ডারের মতো এবং কাঁটাযুক্ত যা পরবর্তীতে প্রজাপতিতে পরিণত হয়। কোনো স্থানের বাস্তুতান্ত্রিক অবস্থা এবং জীববৈচিত্রের সূচক হিসেবে প্রজাপতির ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কোনো স্থানে প্রজাপতির সংখ্যা বেশি দ্বারা বোঝা যায় সেখানে অন্যান্য আর্থ্রোপোডের সংখ্যাও বেশি এবং জীববৈচিত্র্য উন্নত।

মৌমাছি (Bees)

মৌমাছি মূলত আমাদের কাছে মধু সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবেই বেশি পরিচিত। মৌমাছি Arthropoda পর্বের Hymenoptera বর্গের প্রাণি। মৌমাছি মধুর জন্যে পরিচিত হলেও বাস্তুতন্ত্রে এর মূল অবদান পরাগায়নের মাধ্যম হিসেবে। উদ্ভিদে পরাগায়নের মাধ্যম হলো বাতাস, ছোট পাখি কিংবা পোকা জাতীয় প্রাণি। এছাড়া স্বপরাগায়ণও ঘটে। তবে মৌমাছির ভূমিকা পরাগায়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিদজগতে অতোপ্রতোভাবে জড়িত থাকার জন্যে আমরা কেবল মধু না, আমাদের খাদ্য এবং বেঁচে থাকার জন্যেও মৌমাছির ওপর নির্ভরশীল। তাই মৌমাছিকে বাস্তুতন্ত্রের লাইফলাইন বলা হয়।

ক্রাস্টেসিয়ান (Crustaceans)

Arthropoda পর্বের Crustacea উপপর্বের প্রাণিদের ক্রাস্টেসিয়ান বলা হয়। ক্রাস্টেসিয়ানরা জলজ খোলস আবৃত প্রাণি যেমন- চিংড়ি, কাঁকড়া, লবস্টার, ক্রেফিশ ইত্যাদি। এদের খোলস কাইটিনসমৃদ্ধ। ক্রাস্টেসিয়ানরা জলজ বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণি। কারণ এরা জলজ খাদ্যশৃঙ্খলে যোগসূত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ক্রাস্টেসিয়ানরা খাদ্য উৎস হিসেবে অর্থনৈতিক ভাবে মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গুবরে পোকা (Beetles)

বিটলস বা গুবরে পোকা Arthropoda পর্বের Coleoptera বর্গের অন্তর্ভুক্ত। এরা সাধারণত মৃত এবং পচনশীল গাছ থেকে খাদ্যসংগ্রহ করে। বাস্তুতন্ত্রে বিটলসের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এরা পাখি এবং বেশ কিছু স্তন্যপায়ীদের মুখ্য খাদ্যউৎস। এছাড়াও এদের কিছু প্রজাতি পরাগায়নের সাথে জড়িত। পাশাপাশি পুষ্টির পুনর্ব্যবহারে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মথ (Moths)

মথ Arthropoda পর্বের Lepidoptera বর্গের প্রাণি। মথ জীববৈচিত্রে জন্যে দরকারি প্রাণি। এরা প্রজাপতির চেয়ে আকারে ছোট ডানাবিশিষ্ট প্রাণি। পূর্ণবয়স্ক মথ এবং এদের লার্ভারা বিভিন্ন বন্যপ্রাণি, যেমন- পোকা, মাকড়সা, পাখি, ব্যাঙ ইত্যাদি প্রাণির খাদ্য। এছাড়া এরা পরাগায়ন ঘটায় এবং পুষ্টির পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করে। মথেরা বেশিরভাগ সময় খাদ্যউৎস হিসেবে নির্দিষ্ট কোনো উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল।

মেরুদন্ডী প্রাণির সংখ্যা অমেরুদন্ডী প্রাণির তুলনায় অনেক কম। মেরুদন্ডী প্রাণিদের প্রাথমিকভাবে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো- মাছ(Fishes), উভচর(Amphibians), সরীসৃপ (Reptiles), পাখি (Birds) এবং স্তন্যপায়ী (Mammals)। মেরুদন্ডীদের মাঝে জলজ পরিবেশ থেকে স্থলভাগে বসবাস করতে সর্বপ্রথম সক্ষম হয় উভচরেরা। মেরুদন্ডী প্রজাতির সংখ্যা অমেরুদন্ডীদের তুলনায় কম হলেও বাস্তুতন্ত্রে এরা গুরুত্বপূর্ণ।

উভচর (Amphibians)

বিবর্তনের ধারায় উভচরেরা জলজ পরিবেশ থেকে মাছের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে সর্বপ্রথম স্থলে বিচরণ শুরু করে। লার্ভা বা ট্যাডপোল দশায় এরা পানিতে থাকে এবং ফুলকার মাধ্যমে শ্বাসগ্রহণ করে। পরিণত অবস্থায় এরা ডাঙায় বসবাস শুরু করে। তিন ধরনের উভচর দেখা যায়। এরা হলো ব্যাঙ(Frogs), স্যালাম্যান্ডার(Salamanders) এবং সিসিলিয়ান(Caecilians)। বাংলাদেশে ব্যাঙ সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এরা আকারে ছোট হয়। ব্যাঙের চামড়া খসখসে এবং আঙুল চামড়া দ্বারা পরস্পরের সাথে যুক্ত। এদের লেজ নেই। অন্যদিকে, স্যালাম্যান্ডাররা সরীসৃপ ধরনের। এদের দেহ কঙ্কালসার, পা ছোট এবং লেজ রয়েছে। সিসিলিয়ানদের হাত কিংবা পা নেই। এরা দেখতে অনেকটা সাপের মতো। এদের শক্ত খুলি এবং চোখা নাক রয়েছে যা তারা মাটি খোঁড়ার কাজে ব্যবহার করে।  উভচরেরা শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রাণি। এরা মূলত পোকামাকড় এবং অন্যান্য অমেরুদন্ডী প্রাণি খায়। ফলে এরা কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা পালন করে। এরা চামড়া দিয়ে পানি এবং বায়ু শোষণ করতে পারে। ফলে বায়ু এবং পানি দূষণের প্রতি সংবেদনশীল।

সরীসৃপ (Reptiles)

সরীসৃপ বৈচিত্র্যপূর্ণ মেরুদন্ডী। উভচরদের মতো এদের কোনো লার্ভা দশা নেই। এরা ডিম পাড়ে এবং ডিম থেকে আকারে ছোট পরিপূর্ণ সরীসৃপ জন্ম নেয়। সরীসৃপের দেহ লম্বাটে এবং সরু, চামড়া খসখসে, লেজ থাকে। সরীসৃপের কিছু প্রজাতি জীবনকালের বিভিন্ন অংশ স্থল এবং জলজ পরিবেশে কাটায়। বেশিরভাগ প্রজাতি পুরোপুরি স্থলভাগে কাটায়, কেউ বৃক্ষবাসী। এমনকি কিছু প্রজাতি রয়েছে যারা জীবনের পুরো সময় স্থলভাগেই কাটায়। শীতল রক্তবিশিষ্ট হওয়ায় এদের মেরু এবং তুন্দ্রা অঞ্চল বাদে সব জায়গায় দেখা যায়। প্রজাতি অনুযায়ী সরীসৃপদের খাদ্যাভাস বিভিন্নরকম হয়। কিছু প্রজাতি শিকারি হলেও অনেক প্রজাতিই তৃণভোজী। এরা পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং দুর্গন্ধ দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পাখি (Birds)

মেরুদন্ডী প্রাণিদের মাঝে পাখির পরিচিতিমূলক আলোচনা প্রায় অপ্রয়োজন। পালক আবৃত মেরুদন্ডী হিসেবে পাখি পৃথিবী অঞ্চল, এমনকি সমুদ্রেও দেখা যায়। এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে দশ হাজার প্রজাতির পাখি আবিষ্কৃত হয়েছে এবং ক্রমাগতই এর সংখ্যা বাড়ছে। প্রজাতি অনুসারে পাখি উড়তে কিংবা সাঁতার কাটতেও পারে। পাখিরা উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট প্রাণি। এদের খাদ্যাভাস বৈচিত্র্যপূর্ণ। এরা ফলমূল থেকে শুরু কীটপতঙ্গ সবই খায়। শরীর হালকা এবং হাঁড় ফাঁপা হওয়ায় এদের অনেক প্রজাতি উড়তে পারে।

স্তন্যপায়ী প্রাণি (Mammals)

প্রাণিজগতের সবচেয়ে বুদ্ধিমান দল হলো স্তন্যপায়ী। স্তন্যপায়ী প্রাণিরা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র বসবাস করছে। স্তন্যপায়ীরা আকারে ৩০-৪০ মিলিমিটার (বাঁদুড়) থেকে ৩৩ মিটার (নীল তিমি) পর্যন্ত হতে পারে। স্তন্যপায়ীরা জন্মের পর মায়ের স্তনপানের মাধ্যমে বেড়ে ওঠে। এরা উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট এবং এদের শরীর লোমাবৃত। জন্মের পরে কিছুকাল এরা প্যারেন্টাল কেয়ার কিংবা বাবামায়ের যত্নে বেড়ে ওঠে। বাসস্থান অনুযায়ী এদের খাদ্যাভাস একেকরকম। এরা যেমন মাংসাশী হতে পারে (যেমন-বাঘ) আবার তৃণভোজীও হতে পারে (যেমন-হরিণ)। জলজ স্তন্যপায়ীরা (যেমন ডলফিন, তিমি) সামুদ্রিক জীব এবং মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে।

বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য রক্ষার্থে সকল মেরুদন্ডী এবং অমেরুদন্ডী প্রাণি গুরুত্বপূর্ন। কারণ প্রত্যেকের বাস্তুতন্ত্রে আলাদা আলাদা ভূমিকা রয়েছে। পরস্পরের অস্তিত্ব রক্ষার্থে প্রাণিদের মাঝে নানারকম আদান-প্রদান দেখা যায় যা ক্ষেত্রবিশেষে কোনো প্রজাতির জন্যে ক্ষতিকর কিংবা লাভজনক হতে পারে। তবে এই আন্তঃসম্পর্ক জালের ফলে ভারসাম্য রক্ষা হয়। কোনো একটি উপাদানের পরিবর্তন কিংবা বিলুপ্তির ফলে পুরো বাস্তুতন্ত্রে এবং বৃহৎ চিত্রে সমগ্র পরিবেশেই খারাপ প্রভাব পড়ে। বাস্তুতন্ত্রে কোনো প্রজাতি ভিন্ন প্রজাতিভুক্ত প্রাণির দেহে জীবনের এক বা একাধিক পর্যায়ে বাস করতে পারে। এধরনের সম্পর্ককে পরজীবিতা (Parasitism) বলা হয়। পরজীবিতায় বেশিরভাগ সময়ই পোষক জীব ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেমন- উঁকুন। যখন কোনো প্রজাতির নির্ভরশীলতার ফলে অন্য প্রজাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, বরং ক্ষেত্রবিশেষে লাভবান হয় তাকে সহভোজিতা (Commensalism) বলে। যেমন গৃহপালিত পশুর গায়ে থেকে বক পোকামাকড় খায় যা সহভোজিতার উদাহরণ। এছাড়া উভয় প্রাণি যখন উপকৃত হয় তাকে পারস্পারিকতা (Mutualism) বলে। যখন ভিন্ন প্রজাতির মাঝে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ফলে দুই প্রজাতিই উপকৃত হয় তাকে মিথোজীবিতা বলা হয়। বাস্তুতন্ত্রে এধনের আন্তঃসম্পর্কগুলোর ফলে খাদ্যশৃঙ্খল বজায় থাকে।

এছাড়াও পরিবেশে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দেখা যায়। মাইগ্রেশন কিংবা পরিযায়ন এরমঝে অন্যতন। ঋতু পরিবর্তন, খাদ্য স্বল্পতা, জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা বংশানুক্রমিক ধারার ফলে কোনো প্রজাতি নিজ অঞ্চল থেকে দূরবর্তী কোনো অঞ্চলে গমন করাকে পরিযায়ন বলা হয়। সবচেয়ে পরিচিত পরিযায়নের উদাহরণ হলো পাখির পরিযায়ন। শীতকালে আমরা অসংখ্য পরিযায়ী পাখি দেখি যারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঋতু পরিবর্তন কিংবা খাদ্য স্বল্পতার জন্য বাংলাদেশে আসে। তবে কোনো প্রজাতি নিজ অঞ্চল ছেড়ে অন্যকোনো অঞ্চলে গিয়ে বংশবিস্তার করলে এবং সে অঞ্চলের পরিবেশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষতি করলে তাকে আক্রমণকারী প্রজাতি (Invasive species) বলা হয়। যেমন- কচুরিপানা বাইরে থেকে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্যে নিয়ে আসা হলেও বর্তমানে তা সংখ্যাবৃদ্ধি করে দেশের বেশিরভাগ জলাধারে ছড়িয়ে গিয়েছে এবং জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণিদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

পরিবেশ রক্ষার্থে পরিবেশের উপাদান এবং এদের মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক বোঝা জরুরি। মানবসভ্যতার উন্নয়নের সাথে সাথে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নানানভাবে। এর মাঝে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হলো বন্যপ্রাণির বিলুপ্তি। বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ করা বাস্তুতন্ত্র এবং পরিবেশের জন্য দরকারি। তাই বন্যপ্রাণির জীবতত্ত্ব এবং বাস্তুতন্ত্রে এদের আন্তঃসম্পর্কগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। এদের সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ রোধ করে একটি সুস্থ পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য সকলের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে।

তথ্যসূত্র :

1.    Wildlife of Bangladesh: Checklist and Guide by Mohammad Ali Reza Khan

2.     Red List of Bangladesh:

Volume 2 Mammals

3.     Red List of Bangladesh:

Volume 3 Birds

4.     Red List of Bangladesh:

Volume 4: Reptiles and Amphibians

5.     Red List of Bangladesh:

Volume 6: Crustaceans

6.    European Red List of Butterflies

7. https://iucn.org/news/europe/202105/iucn-partnership-butterfly-conservation-uk-and-butterfly-conservation-nl-launches-a-new-project-setting-a-european-red-list-moths

8.    https://www.iucn.org/news/mediterranean/201903/why-beetle-populations-are-plummeting-mediterranean-and-why-we-should-worry

9.    https://portals.iucn.org/library/sites/library/files/documents/RL-4-023.pdf

10.  https://portals.iucn.org/library/sites/library/files/documents/RL-549.3-003-v.6.pdf

11.  https://www.sacnaturecenter.net/visit-us/nature-blog/iucn-red-list-bees-threatened/

12.  https://www.iucn.org/news/europe/201707/eu-discusses-future-action-pollinators-during-european-bee-week