বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী হ্রাসের প্রধান কারণ অতিরিক্ত জনসংখ্যা এবং ব্যাপক হারে বন উজাড় করা। মূলত মানুষ দিন দিন নিজের বাসস্থান, খাদ্য বা অন্যান্য চাহিদা মেটাতে একদিকে যেমন গাছপালা কাটছে অন্যদিকে অধিক হারে বন্যপ্রাণী শিকার করছে।

জলবায়ু এবং ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ। অসংখ্য পশুপাখি, পোকামাকড়, মাছ এবং অন্যান্য প্রাণী দিয়ে ভরপুর আমাদের দেশ। কিন্তু বর্তমান সময়ে ক্রমশ এদের সংখ্যা কমে আসছে। IUCN Red list of Bangladesh (2015) এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১৬১৯ প্রজাতির মধ্যে ৩১ টি প্রজাতি (২%) আঞ্চলিকভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে,৫৬ টি প্রজাতি (৩.৪৫%) বিপন্ন প্রায়,১৮১টি প্রজাতি (১১.১৮%) বিপন্ন,১৫৩ টি প্রজাতি (৯.৪৫%) সুরক্ষিত নয়, ৯০ টি প্রজাতি (৬%) হুমকির কাছাকাছি এবং ৮০২ টি প্রজাতি ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় আছে। IUCN Red list of Bangladesh এর মতে, সমগ্র দেশজুড়ে ৩৮ টি স্তন্যপায়ীর প্রজাতি,৩৯ টি পাখির প্রজাতি, ৩৮ টি সরীসৃপ প্রজাতি, ১০টি উভচর প্রজাতি,৬৪ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ এবং ১৮৮টি প্রজাপতির প্রজাতি হুমকির মধ্যে আছে। যথাযথ পদক্ষেপ সময়মতো না নিলে খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী প্রায় বিলীন হয়ে যাবে। 

বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এদেশের বনাঞ্চল। চট্টগ্রামের পাহাড়ি বনাঞ্চল এবং উপকূলীয় বনাঞ্চল সুন্দরবন ছাড়াও এদেশে একসময় ছিল অনেক শালবন।এ সকল শালবনগুলোতে বিচরণ ছিল বাঘসহ  অন্যান্য বন্যপ্রাণীর। এ সকল শালবনগুলো বেশিরভাগই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হয়ে যায়। তাই এই বনাঞ্চলগুলোর পরিপূর্ণ তথ্য সরকারের কাছে নেই। ফলে, মানুষ যে পরিমাণ গাছ কাটছে তার সঠিক তথ্য সরকারের কাছে আসে না। একদিকে যেমন তারা বন উজাড় করছে, অন্যদিকে বন্যপ্রাণীদেরকে হত্যা করছে। এর কারণে শালবনের সংখ্যা  কমছে, বিলুপ্ত  হচ্ছে সেখানের বন্যপ্রাণীরা। 

বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন ঘটাচ্ছে। এতে করে কৃত্রিমভাবে বন তৈরি  হচ্ছে।কিন্তু সকল বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নিশ্চিত করা হচ্ছে না। কারণ অনেক বন্যপ্রাণীই মানবজাতি থেকে লুকিয়ে বনের গভীরে বসবাস করে। তারা এই কৃত্রিম বনের পরিবেশে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এছাড়াও প্রাকৃতিক বনগুলোতে বিভিন্ন উচ্চতার গাছ থাকে। এ সকল গাছগুলোতে অনেক পাখি তাদের বাসা বানাতো। কৃত্রিম বনের গাছগুলো তাদের বসবাসের উপযোগী না হওয়ায় তারাও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রজাতির প্রাণী এই কৃত্রিম বনে খাদ্য সংকটে পড়ে মারা যাচ্ছে। ফলে এই প্রজাতির উপর খাদ্যের জন্য নির্ভর যেসকল প্রাণী আছে তাদেরও খাদ্যাভাব দেখা দিচ্ছে। এভাবেই কমে যাচ্ছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা। 

গত কয়েক বছরের অনাবৃষ্টি, তাপপ্রবাহ ও নদীর প্রবাহ কমে যাওয়ায় সমুদ্রের পানি উজান থেকে নদীর মিঠা পানিতে মিশে পানিকে লবণাক্ত করে ফেলছে। এ কারণে সে সকল অঞ্চলের মিঠা পানির মাছ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নদীর প্রবাহ কমে যাওয়া ও নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন জলজ প্রাণী যেমন: কুমির, ঘড়িয়াল, শুশুক ইত্যাদি হারিয়ে যাচ্ছে।