“প্রজাপতি প্রজাপতি
কোথায় পেলে ভাই এমন রঙ্গীন পাখা”
প্রজাপতির মতো এত সুন্দর পতঙ্গ পৃথিবীতে পাওয়া দুষ্কর। কল্পনায় যত রঙ ভাবা যায়, তার সবগুলো রঙেরই প্রজাপতি (Butterfly) থাকা সম্ভব। বাহারি কারুকাজযুক্ত নিরীহ পতঙ্গগুলোকে পৃথিবীর সব জায়গাতেই কমবেশি দেখা যায়। সূত্রমতে, পৃথিবীতে প্রায় ২৩,৫০০ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বাংলাদেশে ৫০০- ৫৫০টি প্রজাতি থাকতে পারে, যার মধ্যে ইতোমধ্যে চারশ’ থেকে কিছু কম প্রজাতি শনাক্ত করা গেছে। এ দেশে বর্তমানে তিনটি প্রজাপতি পার্ক রয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়, গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে ও গাজীপুরের বাঘের বাজারে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কের ভেতর।
প্রজাপতি মথের (Moth) মতোই লেপিডপটেরা (Lepidoptera) বর্গের (Order) সদস্য। তাই মথ প্রজাপতির নিকটাত্মীয়। হাতির যেমন শুঁড় (Proboscis) আছে, প্রজাপতিরও তেমনি শুঁড় রয়েছে; যা দিয়ে এরা ফুলের ভিতর থেকে নির্যাস বা রস (Nectar) বের করে আনে। রানী আলেকজান্দ্রার পাখির ডানা’ (Queen Alexandra’s Birdwing) পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রজাপতি। এই প্রজাপতির ডানা দুটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার (সে.মি) বা ২৫০ মিলিমিটার (মি.মি.) লম্বা। আর সবচেয়ে ছোট প্রজাতিটির নাম ‘পশ্চিমা বামন নীল’ (Western Pygmy Blue) লম্বায় যা মাত্র এক সে.মি. বা ১০ মি.মি. হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের প্রজাপতির মধ্যে যেগুলো বহুল ও সচরাচর দৃশ্যমান তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সপ্তপদ্মরাগ, সাত ডোরা, উদয়াবল্লী, ডোরাকাটা বাঘ, নীল ডোরা, ঝালর, হলদে চিতা, হলুদ ময়ূরী, সেনাপতি, বনবেদে, মেঘকুমারী, কৃষ্ণ তরঙ্গ, হলুদ, হরতনি, তিলাইয়া ইত্যাদি। এছাড়াও দুর্লভ ও বিরল প্রজাতির মধ্যে রয়েছে বেগুবিহন, স্বর্ণবিহণ, কৃষ্ণ যুবা, অপ্সরী, শিখা বউল, রূপসী, লোপামুদ্রা, কৃষ্ণমণি, বিনতি, মণিমালা, মোহনা, সাজুন্তি ইত্যাদি।
পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি দিনের বেলা ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায় ও রস পান করে। ফুলের পরাগায়ণে অর্থাৎ গাছের বংশবিস্তারে এরা সাহায্য করে।
প্রকৃতির সুন্দর সৃষ্টিগুলোর মধ্যে ফুল, পাখি ও প্রজাপতি অন্যতম। সুন্দর এই প্রজাপতিগুলো দেখে আমরা মুগ্ধ হই। কিন্তু এদের প্রতি আমরা মোটেও সচেতন নই। আমাদের দেশের শিশু- কিশোর এমনকি বড়রাও সঠিকভাবে প্রজাপতি চেনে না। এদের উপকারিতা সম্পর্কেও বিশেষ কিছু জানে না। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় উদ্ভিদ ও প্রাণী-পাখির মতো প্রজাপতিরও যে ভূমিকা রয়েছে তা অনেকের কাছেই অজানা। এ দেশে কত প্রজাতির প্রজাপতি আছে তার যেমন সঠিক হিসাব নেই, তেমনি কয়টি প্রজাতি বিলুপ্তির দোরগোড়ায় ও কয়টি ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে তার ও সঠিক হিসাব নেই। কাজেই এ বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা প্রয়োজন। কারণ সঠিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি চিনতে না পারলে এদেরকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে না। নিচে কিছু প্রজাতির প্রজাপতি নিয়ে বর্ণনা প্রদান করা হল।
বেণুবিহন
- বাংলা নামঃ বেণুবিহন/ সোনাল
- ইংরেজি নামঃ Common Birdwing
- বৈজ্ঞানিক নামঃ Trades helena (ট্রায়োসে হেলেনা)
- পরিবারঃ Papilionidae (প্যাপিলিওনিডি)
- অবস্থাঃ বিরল
বেণুবিহন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রজাপতি। সামনের ডানার ওপর ও নিচ পুরোপুরি কালো, শিরায় হালকা ধূসর আভা থাকতে পারে। পিছনের ডানা হলুদ ও শিরা কালো এবং ডানার প্রান্ত কালো ও ঢেউ খেলানো। বেণুবিহন সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বনের ঘন জঙ্গল ও বনের কিনারার খোলা প্রান্তরে বাস করে। সকাল ও বিকেলে ফুলে ফুলে উড়ে রস পান করে।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও নেপালসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ, যেমন- থাইল্যান্ড, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং পাপুয়া নিউগিনি, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত এরা বিস্তৃত।
লাঠিয়াল
- বাংলা নামঃ লাঠিয়াল / হলদে খঞ্জর
- ইংরেজি নামঃ Five-bar Swordtail
- বৈজ্ঞানিক নামঃ Graphium antiphates (ফিয়াম অ্যান্টিফেইটস)
- পরিবারঃ Papilionidae (প্যাপিলিএনিডি)
- অবস্থাঃ বিরল
বাংলাদেশের সুন্দর প্রজাপতিগুলোর মধ্যে লাঠিয়াল অন্যতম। ছেলে ও মেয়ে প্রজাপতির চেহারা একই রকম। সামনের ডানার উপরের ভিত্তি রঙ সাদা ও তার উপর পাঁচটি কালো ডোরা। ডানার নিচটা দেখতে উপরের মতোই। তবে কালো ডোরার মাঝখানে সাদার উপর সবুজের আভা রয়েছে। পিছনের ডানার নিচের ভিত্তিমূল সবুজ ও তাতে কমলা-হলদে পার্শ্বদাগ দেখা যায়। ডানার মতো দেহ এবং পায়েও একই ধরনের রঙ ও কারুকাজ। তলোয়ারের মতো কালচে-বাদামি রঙের লম্বা লেজটি সাদা রঙে মোড়ানো থাকে। শুঁড় ও চোখ গাঢ় কালো।
লাঠিয়াল সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি ও আর্দ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। একাকী, জোড়ায় বা দলেবলে দেখা মেলে এদের। বেশ দ্রুতগতিতে এবং বাহারি ঢঙে ওড়ে। সচরাচর গাছের উপরের দিকে চক্রাকারে উড়তে থাকে।
সুদর্শন এই প্রজাপতি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে বিচরণশীল ।
উদয়াবল্লী
- বাংলা নামঃ উদয়াবল্লী/ কালিম
- ইংরেজি নামঃ Common Mormon
- বৈজ্ঞানিক নামঃ Papilio polytes (প্যাপিলিও পলিটেস)
- পরিবারঃ Papilionidae (প্যাপিলিওনিডি)
- অবস্থাঃ বহুল দৃশ্যমান।
উদয়াবল্লীর দেহের মূল রঙ কালো। ডানার উপরটা কুচকুচে কালো। সামনের ডানার নিচের প্রান্তে কয়েকটি সাদা দাগ। পিছনের ডানার প্রান্ত খাঁজকাটা ও নিচের প্রান্তে একটি করে লেজ রয়েছে। ডানার মাঝে সাদা সাদা দাগ। এছাড়াও ডানার নিচের প্রান্তে কয়েকটি বাকা চাঁদের মতো সাদা দাগ রয়েছে, যার ওপর অল্প কয়েকটি লাল দাগ দেখা যায়। ছেলে ও মেয়ে দেখতে একেবারেই আলাদা। ছেলের ডানার দাগগুলো হালকা ও অস্পষ্ট এবং মেয়ের দাগগুলো বেশ স্পষ্ট। তিন ধরনের মেয়ে প্রজাপতি দেখা যায়। পিছনের ডানায় লালচে চোখের মতো ফোঁটার সংখ্যা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মেয়ে প্রজাপতি আলাদা করা যায়।
লেজওয়ালা প্রজাপতির মধ্যে উদয়াবল্লী সহজেই চোখে পড়ে। এ দেশের সব এলাকায়ই এদের দেখা যায়— কি সমতলভূমি, কি পাহাড়ের ২,০০০ মিটার উচ্চতা- সবখানেই। এরা দ্রুত উড়তে পারে ও কিছুটা এঁকেবেঁকে ওড়ে।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, তিমুর প্রভৃতি দেশে এদেরকে দেখা যায়।
ডোরাকাটা বাঘ
- বাংলা নামঃ ডোরাকাটা বাঘ/ বাঘ/ বাঘবান্না/ কস্তুরী শার্দূল
- ইংরেজি নামঃ Striped Tiger/ Cormmon Tiger ।
- বৈজ্ঞানিক নামঃ Danaus genutia (ডানাউস জেনুশিয়া)
- পরিবারঃ Nymphalidae ( নিম্ফালিডি)
- অবস্থাঃ সচরাচর দৃশ্যমান
ডোরাকাটা বাঘের ডানার দাগ ও রঙ অনেকটা আমাদের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার’-এর মতো। সামনের ডানার উপরের অংশ গাঢ় কমলা-বাদামি এবং পিছনের ডানাগুলো হালকা কমলা-বাদামি। সামনের ডানার চূড়া কালো; তার নিচে তিনটি স্পষ্ট কমলা ও কতগুলো সাদা দাগ। এছাড়াও পুরো ডানার প্রান্তজুড়ে রয়েছে কালো বন্ধনী, যার ওপর দু’সারি সাদা ফোঁটা মাথা, বুক ও পেটেও কালোর উপর সাদা ফোঁটা। দেহের নিচটা উপরের মতোই, তবে হালকা। ছেলে প্রজাপতির পিছনের ডানার নিচে সাদা-কালো ফোঁটা থাকে। দেহ ও ডানার উজ্জ্বল কমলা ও কালো রঙ বেশ বিষাক্ত। আর এই রঙ দেখেই শত্রুরা এদের ধারে কাছেও আসে না।
এ দেশের সব অঞ্চলেই এরা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। তবে অতি বৃষ্টিপাতপ্রবণ এলাকায় বেশি দেখা যায়। এরা পরিযায়ী স্বভাবের। সারাবছরই ঝোপ-জঙ্গল ও বাগানের ফুলে ফুলে উড়ে উড়ে রস পান করে বেড়ায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের ২,৫০০ মিটার উঁচুতেও দেখা মেলে। এরা ধীরগতিসম্পন্ন প্রজাপতি।
বাংলাদেশ ছাড়াও পুরো এশিয়া, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো এবং ক্যানারি দ্বীপে এদের দেখা মেলে।
নীল ডোরা
- বাংলা নামঃ নীল ছোৱা/ নীল কমল/ হিমলকুচি
- ইংরেজি নামঃ Blue Tiger/ Common Blue Tiger
- বৈজ্ঞানিক নামঃ Tirumala limniace (তিরুমালা লিমনিয়াস)
- পরিবারঃNymphalidae ( নিম্ফালিডি)
- অবস্থাঃ সচরাচর দৃশ্যমান
নীল ডোরা দেখতে পুরোপুরি ডোরাকাটা বাঘের মতো। শুধু ডোরাকাটা বাঘের কমলা-বাদামি রঙের পরিবর্তে থাকে নীল রঙ। সামনের ডানা হালকা নীল। পিছনের ডানার এই নীল আর হালকা আর কালো শিরাগুলো বেশ মোটা ও স্পষ্ট। পেট, বুক ও মাথায় কালোর উপর যে সাদা ফোঁটা রয়েছে তা ডোরাকাটা বাঘের মতো সামনের ডানায় নেই। দেহ ও ডানার উজ্জ্বল রঙের মাধ্যমে এরাও সহজেই শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে থাকে।
এ দেশের সব এলাকায়ই নীল ডোরার দেখা মেলে। আকারে ডোরাকাটা বাঘের থেকে কিছুটা বড় হয়। এরাও পরিযায়ী স্বভাবের। তবে গভীর জঙ্গল এবং বৃষ্টিপাতহীন এলাকা এরা পছন্দ করে না। সারা বছর দেখা গেলেও বর্ষাকাল ও বর্ষার শেষেই বেশি চোখে পড়ে। ধীরগতিসম্পন্ন হলেও প্রয়োজনে বা বিরক্ত হলে দ্রুতগতিতে উড়তে পারে।
বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার অনেক দেশেই নীল ডোরার দেখা মেলে। হিমালয় পর্বতের ২,০০০ মিটার উঁচুতেও দেখা যায়।
ঝালর
- বাংলা নামঃ ঝালর/ চোরকাটা কমলা
- ইংরেজি নামঃ Leopard Lacewing
- বৈজ্ঞানিক নামঃ Cethosia Cyane( সিথোশিয়া সায়ানে)
- পরিবারঃ Nymphalidae( নিম্ফালিডি)
- অবস্থাঃ বহুল দৃশ্যমান
এ দেশের সুন্দরতম প্রজাপতিগুলোর আরেকটি প্রজাতির নাম ঝালর। এই প্রজাপতির ছেলেগুলোর ঝালরের দিকে খেয়াল না করলে হঠাৎ দেখতে ডোরাকাটা বাঘ বলে মনে হতে পারে। এদের ডানার উপরের দিকের রঙ উজ্জ্বল হলদে-বাদামি। তার উপর রয়েছে বিভিন্ন আকারের অসংখ্য কালো কালো দাগ বা ফোঁটা। উপরের ডানার দু’কিনারা কালো এবং এরপর রয়েছে সাদা দাগ। উপর ও নিচের ডানার কিনারা ঢেউ খেলানো ও তাতে বিধাতা অতি সুন্দর সাদা-কালো ঝালর তৈরি করে দিয়েছেন। ছেলের তুলনায় মেয়ের ডানার রঙ হালকা, বিশেষ করে নিচের ডানার রঙ। তাছাড়া কালো দাগ বা ফোঁটাগুলোও ছেলের তুলনায় বড় ও একটির সঙ্গে অন্যটি যেন মিশে গেছে। ডানাসহ দেহের নিচের দিকের রঙ অনুজ্জ্বল বাদামি।
ঝালর এ দেশের প্রায় সবখানেই দেখা যায়। তবে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সহজেই চোখে পড়ে। এরা আর্দ্র পাতাঝরা, চিরসবুজ ও আধা-চিরসবুজ বনাঞ্চল বেশি পছন্দ করে। দ্রুত উড়তে সক্ষম হলেও সাধারণত ধীরগতিতে ওড়ে।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের কোনো কোনো রাজ্য ও মিয়ানমারে এদের দেখা যায়।
হলুদ ময়ূরী
- বাংলা নামঃ হলুদ ময়ূরী/ সোনালী চক্র / স্বর্ণচক্র / কমলা শিখীপর্ণ / নয়ন
- ইংরেজি নামঃ Peacock Pansy
- বৈজ্ঞানিক নামঃ Junonia almana (জুনোনিয়া অ্যালমানা)
- পরিবারঃ Nymphalidae( নিম্ফালিডি)
- অবস্থাঃ বহুল দৃশ্যমান
হলদে রঙের মাঝারি আকারের এই প্রজাপতির ডানায় ময়ূরের পালকের মতো চোখ থাকে। আর তাই এর নাম হলুদ ময়ূরী। দেহ ও ডানার উপরের দিকটা গাঢ় হলদে-বাদামি এবং নিচের দিকটা হালকা বাদামি। পিছনের ডানা দুটি দেখতে পাতার মতো। মেয়ে প্রজাপতির ডানার উপরের রঙ হলুদ ও ছেলের ক্ষেত্রে তা বাদামি। সামনের ও পিছনের প্রতিটি ডানায় দুটি করে চক্র দেখা যায় – একটি বড় ও একটি ছোট। পিছনের ডানার বড় চক্রটি সামনের ডানার চক্রটির থেকে আকারে বড় ও তাতে দুটি করে সাদা দাগ রয়েছে, যা হলুদ ও কালো বৃত্ত দিয়ে আবৃত। এগুলো দেখতে অনেকটা চোখের মতো। সামনের ডানার উপরের দিকে গাঢ় রঙের ডোরা রয়েছে। দু’ডানার প্রান্তে বাদামি রঙের ঢেউ খেলানো।
এ দেশের প্রায় সবখানেই হলদে ময়ূরী দেখা যায়। তবে প্রচুর বৃষ্টিপাতসম্পন্ন উন্মুক্ত এলাকা, ধানখেত ও জলার আশপাশ, ফুলের বাগান ইত্যাদি এদের পছন্দ। সমুদ্রপৃষ্ঠের ২,০০০ মিটার উঁচুতেও দেখা যায়।
বাংলাদেশ ছাড়াও হলদে ময়ূরী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশে পাওয়া যায়।
কৃষ্ণ তরঙ্গ
- বাংলা নামঃ কৃষ্ণ তরঙ্গ/ মরচে পাতা
- ইংরেজি নামঃ Common Castor
- বৈজ্ঞানিক নামঃ Ariadne merione (অ্যারিয়াডনে মেরিওন)
- পরিবারঃ Nymphalidae( নিম্ফানিডি)
- অবস্থাঃ বহুল দৃশ্যমান
কৃষ্ণ তরঙ্গ প্রজাপতির ডানা ও দেহের উপরের দিক মরিচা বাদামি ও তাতে প্রচুর আড়াআড়ি কালো ঢেউ খেলানো রেখা থাকে। তাই অনেকে এদেরকে মরচেপাতা নামেও ডাকে। মেয়ে প্রজাপতির ডানার ঢেউ খেলানো রেখাগুলো ডোরার মতো হয়ে থাকে। সামনের ডানার উপরের দিকে একটি করে সাদা ফোঁটা ও প্রান্তে ছোট সাদা দাগ রয়েছে। পিছনের ডানার প্রান্ত ঢেউ খেলানো হতেও পারে, নাও হতে পারে। ডানা ও দেহের নিচের দিকের রঙ বেশি গাঢ় হয়।
কৃষ্ণ তরঙ্গ রেড়িজাতীয় (Castor) গাছ যেখানে আছে সেখানে থাকতে বেশি পছন্দ করে। অতি সক্রিয় এই প্রজাপতি গাছের মগডালে বিশ্রাম নিতে ভালোবাসে।
বাংলাদেশসহ নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় এই প্রজাপতি দেখা যায়।
হরতনি
- বাংলা নামঃ হরতনি / রাগ নকশী
- ইংরেজি নামঃ Common jezebel
- বৈজ্ঞানিক নামঃ Delias eucharis (ডেলিয়াস ইউচারিস)
- পরিবারঃ Pieridae (পাইরিডি)
- অবস্থাঃ বহুল দৃশ্যমান
সুন্দর এই প্রজাপতিটির রঙের বাহার কিন্তু এর ডানার নিচের দিকে। ডানাসহ দেহের উপরের দিকের রঙ মূলত সাদা। সামনের ডানার গোড়ার দিকের অংশ সাদা হলেও উপরের প্রান্তের বা চূড়ার অংশ হলদে। আর ডানার শিরাগুলো প্রশস্ত ও কালো। পিছনের ডানার গোড়ার দিকের অংশ উজ্জ্বল হলুদ; আর কিনারার অংশ দেখলে মনে হবে বিধাতা যেন বা সেখানে একনারি পঞ্চভূত আকারের কমলা-লাল ইট সাজিয়ে রেখেছেন। পিছনের ডানার শিরাগুলোর রঙও কালো। মেয়ে হরতনির সামনের ডানার শিরাগুলো ছেলের থেকেও প্রশস্ত। আর তাই মেয়েটিকে ছেলেটির থেকেও সুন্দর দেখায়।
হরতনি বন্যাপ্রবণ এলাকার প্রজাপতি হলেও সবখানেই বাস করতে পারে। কিন্তু ঘন বন ও ঘাসবনে দেখা যায় না। সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি বন বাদে সবখানেই আছে। শহর-বন্দর-গ্রাম যেখানেই এদের খাদ্য সরবরাহকারী গাছ আছে, সেখানেই ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াতে দেখা যায়। তাছাড়া পানির কাছাকাছি থাকতেও পছন্দ করে। বেশ ধীরগতিতে ও পতপত শব্দে ওড়ে।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে দেখা যায়।
হলুদ
- বাংলা নামঃ হলুদ / তৃণ গোধূম
- ইংরেজি নামঃ Common Grass Yellow
- বৈজ্ঞানিক নামঃ Eurema hecabe ( ইউরিয়া হেকাবে)
- পরিবারঃ Pieridae (পাইরিডি)
- অবস্থাঃ বহুল দৃশ্যমান
গাঢ় হলুদ রঙের এই প্রজাপতিগুলো দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। ডানাসহ এদের পুরো দেহ-ই গাঢ় হলুদ রঙে মাখানো। এই হলুদের ওপর থাকে বিভিন্ন আকারের কালো বা খয়েরি কালো ফোঁটা। সামনের ডানার উপরের দিকের কিনারায় কালো বর্ডার রয়েছে। মৌসুমভেদে এদের, বিশেষ করে ছেলেগুলোর দেহের রঙে পার্থক্য দেখা যায়। সাধারণত ভেজা মৌসুমের ছেলেগুলো বেশি উজ্জ্বল হয়। এছাড়াও আরও দুই প্রজাতির হলুদ প্রজাপতি রয়েছে। সামনের ডানার নিচের দিকের অংশের কালো ফোঁটার সংখ্যার মাধ্যমে এদের পৃথক করা যায়। ছেলে ও মেয়ে দেখতে অনেকটা একই রকম।
হলুদ প্রজাপতি অত্যন্ত সহজলভ্য। এ দেশের সবখানেই দেখা যায়। চিরসবুজ ও পাতাঝরা বন, বাগান, ঝোপঝাড়, পার্ক, শহর-বন্দর-গ্রাম সবখানেই আছে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এরা সক্রিয় থাকে। অতিরিক্ত গরম বা প্রখর রোদের সময় পাতার নিচের দিকে ঝুলতে থাকে।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও অন্যান্য অনেক দেশেই এদের দেখা যায়।