1.1    বন্যপ্রাণী কী?

বন্যপ্রাণী শব্দটি ইংরেজি Wildlife থেকে উৎপন্ন হলেও Wildlife এর প্রকৃত বঙ্গানুবাদ হলো বন্যজীব বা বন্যপ্রাণ। প্রাণী, উদ্ভিদ ও অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণ মিলেই আমাদের জীবজগৎ। যেসকল প্রাণী গৃহপালিত নয় অর্থাৎ যাদের জীবনধারণের জন্য মানুষের উপর নির্ভর করতে হয়না, তাদেরকে আমরা বন্যপ্রাণী বলি। আর বন্যপ্রাণী যে প্রাকৃতিক প্রতিবেশে বাঁচে, সকল উদ্ভিদ ও অন্যান্য জীব তারই অন্তর্ভুক্ত। সেই হিসেবে Wildlife এর মানে দাঁড়ালো বন্যপ্রাণ অথবা বন্যপ্রাণী ও তার প্রতিবেশ।

বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিবেশে বেঁচে থাকা সব প্রাণীই বন্যপ্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। যেমনঃ বাঘ, হরিণ, ভোঁদর, ঢোঁড়াসাপ, মাছরাঙা এরা সবাই বন্যপ্রাণী। আবার বন্যপ্রাণী হলেই যে স্থলভূমিতে বা বনে বাস করতে হবে এমন কথা নেই। জলে বাস করা প্রাণিরাও কিন্তু বন্যপ্রাণী। যেমনঃ তিমি, শুশুক, মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীরা।  

আবার মানুষের বাড়িতে বা খামারে যে গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়াল, হাঁস, মুরগী পালন করা হয়, এরা কিন্তু বন্যপ্রাণী নয়। কারণ এরা মানুষের সাহায্য ছাড়া বাঁচতেই পারবে না। কিন্তু ঘরে যে টিকটিকি আমরা দেখি, তারা আবার বন্যপ্রাণী। কারণ তাদের বেঁচে থাকার জন্য মানুষের সাহায্যের দরকার হয়না। এজন্য এরা বন-জঙ্গলে না থাকলেও এরা বন্যপ্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। টিকটিকির মতো আরও অনেক প্রাণী মানুষের এত কাছাকাছি বসবাস করে যে এদেরকে বন্যপ্রাণী হিসেবে ভাবতে ইচ্ছা করে না আমাদের। যেমনঃ চড়ুই পাখি, জালালী কবুতর, ইঁদুর ইত্যাদি। এরা যতই লোকালয়ের কাছাকাছি বাস করুক – মানুষের সাহায্য ছাড়াই এরা খাদ্য সংগ্রহ, প্রজনন ও বাসস্থান তৈরিতে সক্ষম। তাই এরাও বন্যপ্রাণী।

1.2    বন্যপ্রাণীর গুরুত্ব

প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে মানুষকে রক্ষা করে বন্যপ্রাণী। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। বিদেশে ব্যাঙের পা রান্না করে খাওয়ার খুব চাহিদা থাকায় বাংলাদেশ ১৯৭০-৮০ সালের দিকে বিদেশে প্রচুর ব্যাঙের পা রপ্তানি করতে শুরু করলো। রপ্তানির জন্য ব্যাঙ শিকারের কারণে আমাদের দেশে ব্যাঙের সংখ্যা অনেক কমে গেল। আর ব্যাঙের প্রিয় খাদ্য কীট-পতঙ্গ। ফলে দেশে কীট-পতঙ্গের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল, আর তারা আমাদের ফসল খেয়ে ফেলতে লাগলো। কৃষকরা ফসল বাঁচাতে প্রচুর কীটনাশক ব্যবহার করা শুরু করলো। হিসেব করে দেখা গেলো, ব্যাঙের পা রপ্তানি করে বাংলাদেশ যে টাকা আয় করলো, তার থেকে বেশি টাকা খরচ হয়ে গেল কীটনাশক কিনতে। তাহলে ব্যাঙ শিকার করে লাভ হলো, নাকি উলটো ক্ষতিই হলো?

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা ছাড়াও বন্যপ্রাণীর কিন্তু অনেক ধরনের গুরুত্ব রয়েছে। মানবজাতির বেঁচে থাকার জন্য যেমন তাদের দরকার, তেমনি চিকিৎসাবিজ্ঞান, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এদের গুরুত্ব অনেক। আমাদের সুন্দরবনের বাঘ দেখতে প্রতিবছর অনেক পর্যটক সুন্দরবনে বেড়াতে আসে, এমনকি বিদেশ থেকেও অনেকে আসে। টাঙ্গুয়ার হাওরসহ অন্যান্য স্থানে অতিথি পাখি দেখতে ভীড় করে পর্যটকেরা। এরকম আরও অনেক বন্যপ্রাণী আছে, যাদের দেখতে পর্যটকেরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে আসে। এভাবে বাঘ, অতিথি পাখি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীরা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে। আমরা এখন যে মুরগী খাই, এটি কিন্তু অনেক বছর আগে বনমোরগকে জঙ্গল থেকে নিয়ে এসে গৃহপালিত করার ফলেই সম্ভব হয়েছে। এভাবে হাঁস, গরু, ছাগল এসবই কিন্তু আমাদের একসময়ের পোষ মানানো বন্যপ্রাণীদের বংশধর।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণায় ব্যবহৃত প্রাণিগুলো কিন্তু কোনো না কোনোভাবে বন্যপ্রাণী থেকেই এসেছে। অন্যদিকে, বিভিন্ন ঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস থেকে সুন্দরবন সহ অন্যান্য বনগুলো আমাদেরকে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। বন্যপ্রাণী না থাকলে কিন্তু এসব বনও বিলুপ্ত হয়ে যেত। বন বাঁচিয়ে রাখে প্রাণীকে, আর প্রাণী বাঁচিয়ে রাখে বনকে। বন্যপ্রাণী না থাকলে ফুলের পরাগায়ন হয়ে ফসল ফলবে না, ফল হবে না, উদ্ভিদের বীজ দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়বে না।

মানুষের হাজার বছরের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিতেও কিন্তু বন্যপ্রাণীর অবদান অনেক। ছোটবেলায় সবাই নিশ্চয় এই কবিতা পড়েছো:

আয়রে আয় টিয়ে

নায়ে ভরা দিয়ে,

না’ নিয়ে গেল বোয়াল মাছে,

তাই না দেখে ভোঁদড় নাচে।

আরেকটু বড় হয়ে পড়েছো জীবনানন্দের কবিতা:

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়

হয়তো মানুষ নয় – হয়তো বা শঙখচিল শালিকের বেশে,

হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে

বিভিন্ন দেশীয় রূপকথা যেমন ঠাকুরমা’র ঝুলি-তে অনেক বাস্তব ও কাল্পনিক প্রাণীর কথা সবাই পড়েছি। এছাড়া প্রাচীন সাহিত্য চর্যাপদ, চণ্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গল ইত্যাদি সাহিত্যে কাক, কোকিল, সাপসহ অনেক প্রাণীর কথা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, সুকুমার রায়সহ প্রায় সকল সাহিত্যিকই বিভিন্ন প্রাণীর কথা লিখেছেন সাহিত্যের প্রয়োজনে। এমনকি বন্যপ্রাণীকে রূপক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন গল্পে। যেমনঃ হাসান হাফিজুর রহমান রচিত একজোড়া পাখি বা হাসান আজিজুল হক রচিত শকুন। এভাবে যুগযুগ ধরে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অজস্র গল্প, কবিতা, উপন্যাস।

উপরের উদাহরণগুলো ছাড়াও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আরও হাজারো কারণ রয়েছে। এতএত কারণে বন্যপ্রাণীকে আমাদের দরকার যে কিছুতেই এদেরকে বিলুপ্ত হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের সকলকেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে। তবে সব কারনের বড় কারণটি হলো ভালোবাসা। মানুষসহ সকল প্রাণী মিলেই এই সুন্দর পৃথিবী, এখানে বেঁচে থাকার অধিকার সবারই আছে, মানুষ যেমন সুন্দর, বন্যপ্রাণীরাও সুন্দর। ভাল মানুষ যেমন একে অপরকে ভালবাসে, তার কষ্টে কষ্ট পায়, বিপদে সাহায্য করে, তেমনি তারা বন্যপ্রাণীদেরও ভালবাসে, তাদের দুঃখেও দুঃখ পায়, তাদের মৃত্যুতে কষ্ট পায়। কোনো মানুষ বিপদে পড়লে আমরা যেমন সবাই মিলে সাহায্য করি, তেমনি বন্যপ্রাণীদের বিলুপ্তি রোধেও আমাদের সবাই মিলে এগিয়ে আসতে, তাদের সংরক্ষণের জন্য কাজ করতে হবে, তাদের ভালবাসতে হবে।   

1.3    বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

যদি বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণের জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তাহলে কালের মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে অনেক বন্যপ্রাণী, ভেঙে পড়বে বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অস্তিত্বও পড়বে হুমকির মুখে। আমরা সুন্দরবনের মৌমাছির মত অনেক বন্যপ্রাণী থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হই, সাপের বিষ থেকে বানানো হয় জীবন রক্ষা করার ঔষধ। বিভিন্ন বন্যপ্রাণীকে মুক্ত অবস্থায় দেখার জন্য গড়ে উঠেছে এক বিশেষ ধরনের টুরিজম, যেখান থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। সুন্দরবন টুরিজমের মূল আকর্ষণ কিন্তু সুন্দরবনের বাঘ এবং হরিণ। ইদানিং বন্যপ্রাণীদের এবং তাঁদের জীবনযাত্রা নিয়ে গবেষণা করে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান বের করা হচ্ছে যাকে বলা হচ্ছে বায়মিমেটিক্স (Biomimetics)। অধিকাংশ বন্যপ্রাণীর প্রতিবেশগত ভূমিকা বা অর্থনৈতিক গুরুত্ব আমরা এখনো বুঝতেই পারিনি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এগুলো খুঁজে বের করবে। অনাগত প্রজন্ম যাতে এসব প্রাণীর গুরুত্ব বের করে তাদেরকে কাজে লাগাতে পারে সেজন্যও বন্যপ্রাণীদের টিকিয়ে রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।

এজন্য সরকারি ও অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলগুলো রক্ষা করা জরুরি, বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক সংখ্যাবৃদ্ধি নিশ্চিত করা জরুরি, মানুষকে সচেতন করা জরুরি, সর্বোপরি বন্যপ্রাণীকে সংরক্ষণ করা জরুরি। নাহলে অবহেলায় ও প্রতিহিংসায় একসময় কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ সকল বন্যপ্রাণী। এই অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ সবাই মিলে একতাবদ্ধ হয়ে আমাদেরই সংরক্ষণ করতে হবে।

1.4    শ্রেণিবিন্যাস

পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অব্দি বিবর্তনের ধারায় নানান রকম জীবের উদ্ভব যেমন হয়েছে, অনেক জীবের বিলুপ্তিও ঘটেছে। এতসব প্রজাতির উদ্ভব এবং বিকাশ এককভাবে জানা এবং বোঝা অসম্ভব। তাই জীবসমুহকে তাদের বিকাশে উপর ভিত্তি করে শ্রেণিতে বিভক্ত করার চেষ্টা করে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে একটি প্রজাতির উদ্ভব এবং বিকাশের পরিপূর্ণ চিত্র দেখা যায়। এছাড়াও জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণের জন্যে শ্রেণিবিন্যাস অপরিহার্য। শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি থেকেই জীববিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা বা ট্যাক্সোনমির সূচনা। আধুনিক শ্রেণিবিন্যাসের জনক এবুং দ্বিপদী নামকরণের প্রবর্তক ক্যারোলাস লিনিয়াস পুরো জীবজগতকে দুইটি রাজ্য বা কিংডমে বিভক্ত করেন, উদ্ভিদ এবং প্রাণী। তিনি  পরবর্তীতে কোষ সংখ্যা, জিনোম ইত্যাদি বিবেচনার আওতায় এনে শ্রেণিবিন্যাসের আরও কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।

শ্রেণিবন্যাস ধাপে ধাপে করা হয়। শ্রেণিবিন্যাসের ধাপগুলোকে ট্যাক্সন (বহুবচনে ট্যাক্সা) বলা হয়। নেস্টেড হায়ারার্কি অনুসরণ করে শ্রেণিবিন্যাসের ধাপগুলো সাজানো হয়। অর্থাৎ, সবচেয়ে উপরের ধাপকে একটি সেট হিসেবে ধরা হলে পরের ধাপটি সেই সেটের একটি উপসেট হয়। একটি সেটের বৈশিষ্ট্য কম থাকায় জীব সংখ্যা বেশি। উপসেটে বৈশিষ্ট্য এবং নির্দিষ্টতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাণির সংখ্যা কমে যায়। এভাবে আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে সাতটি ধাপে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। এর সর্বশেষ ধাপ প্রজাতি যা একটি মাত্র জীবের অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। শ্রেণিবিন্যাসের ধাপগুলো হলো- জগত (Kingdom), পর্ব (Phylum), শ্রেণি (Class), বর্গ (Order), গোত্র (Family), গণ (Genus), প্রজাতি (Species)।

চিত্রঃ শ্রেণিবিন্যাসের ধাপসমূহ

প্রাণিজগত নিয়ে আলোচনাকালে পুরো প্রাণিজগতকে মেরুদণ্ডী এবং অমেরুদণ্ডী এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। জীবনের যেকোনো পর্যায়ে প্রাণির নটোকর্ড থাকলে তাকে মেরুদণ্ডী প্রাণী (vertebrates) বলা হয়। যেসব প্রাণির নটোকর্ড থাকে না তাদের অমেরুদণ্ডী প্রাণী (Invertebrates) বলা হয়। পৃথিবীতে আবিষ্কৃত প্রাণির শতকরা ৮০ ভাগ অমেরুদণ্ডী প্রাণি। আমাদের চারপাশে মাকড়সা, শামুক, ফড়িং, প্রজাপতি থেকে শুরু করে অসংখ্য প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণি রয়েছে। অমেরুদণ্ডী প্রাণি পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রে সামগ্রিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাস্তুতন্ত্রের নানান স্তরে এদের ভূমিকা থাকায়, মানুষ অমেরুদণ্ডী প্রাণির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মানুষ মধুর জন্যে মৌমাছির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া, ফুলের পরাগায়নের জন্যেও মৌমাছি গুরুত্বপূর্ণ। তবে বেশিরভাগ সময়ই অমেরুদণ্ডী প্রাণিদের ব্যাপারে আমাদের জানার পরিধি কম থাকায় আমরা তাদের রক্ষার্থে সচেতন হই না।

1.5    বন্যপ্রাণী বিষয়ক পরিভাষা ও সংজ্ঞা

কনজারভেশন স্ট্যাটাস (Conservation Status)

1.      বিলুপ্ত – Extinct (EX) : প্রকৃতিতে যেসব প্রজাতির কোনো জীবিত প্রাণী বর্তমানে নেই।

2.      বন্য পরিবেশে বিলুপ্ত – Extinct in the Wild (EW) : যেসব প্রজাতি প্রকৃতিতে তাদের সাধারণ বাসস্থান থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে কিন্তু বন্দী অবস্থায় (Captivity) সংরক্ষণ করা হয়েছে।

3.      বিপদাপন্ন – Threatened : যেসব প্রাণী নিকট ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই শ্রেণিটি তিন ভাগে বিভক্তঃ

                a. মহাবিপন্ন – Critically Endangered (CR) : যেসব প্রাণির প্রকৃতিতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার প্রচণ্ড ঝুঁকিতে রয়েছে।

                b. বিপন্ন – Endangered (EN) :  যেসব প্রাণী নিকট ভবিষ্যতে মহাবিপন্ন হয়ে যেতে পারে।

                c. সংকটাপন্ন – Vulnerable (VU) : যেসব প্রাণী ভবিষ্যতে বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে, যদি তাদের বর্তমান হুমকিগুলো দূর করা না হয়।

4.      প্রায়-বিপদাপন্ন – Near Threatened (NT) : নিকট ভবিষ্যতে যেসব প্রাণির সংকটাপন্ন হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

5.      ন্যূনতম বিপদাপন্ন – Least Concern (LC) : খুব কম ঝুঁকিতে রয়েছে।

6.      উপাত্তগতভাবে অপ্রতুল – Data Deficient (DD) : ঝুঁকি পরিমাপের জন্য যথেষ্ট তথ্য নেই।

7.      মূল্যায়ন হয়নি – Not Evaluated (NE) : ঝুঁকি পরিমাপ করা হয়নি।

বিঃ দ্রঃ আমাদের মূল চিন্তা প্রধানত বিপদাপন্ন প্রজাতিদের নিয়ে। সেক্ষেত্রে মহাবিপন্ন (CR), বিপন্ন (EN) এবং সংকটাপন্ন (VU) শ্রেণি নিয়ে আমাদের সচেতন এবং কার্যকর হওয়া উচিত।

কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা

  • অভয়ারণ্য: অভয়ারণ্য হচ্ছে সে সকল এলাকা যেখানে বন্যপ্রাণীরা নিরাপদে বংশবিস্তার করতে পারবে এবং যেখানে বন্যপ্রাণীদের মারা, গুলি ছোড়া, তাদের ধরা এবং তাদের শিকারের জন্য ফাঁদ পাতা নিষেধ।
  • ইকোপার্ক: ইকোপার্ক হচ্ছে এমন একটি অঞ্চল যা বন্যপ্রাণীদের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক আবাসস্থল এবং যেখানে পর্যটন সুবিধা রয়েছে সাধারণ জনগণের।
  • ইকোট্যুরিজম: প্রকৃতির কোনো ক্ষতিসাধন না করে প্রকৃতিতে এমনভাবে ভ্রমণ করা যার মাধ্যমে কোনো প্রাকৃতিক বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগত এলাকার পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন হয়, এবং স্থানীয় জনসাধারণের সামাজিক উন্নয়ন হয়।
  • কুঞ্জবন: কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি ও লতাগুল্মের সমাহার, যা ওই এলাকার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও প্রথাগত প্রভাব রাখে।
  • জলাভূমি: স্রোতবিহীন মিঠা বা নোনা পানির জলাশয় অথবা নিচু স্যাঁতস্যাঁতে জলনিমগ্ন পিটভূমি।
  • জাতীয় উদ্যান: জাতীয় উদ্যান হচ্ছে এমন একটি সৌন্দর্যমণ্ডিত তুলনামূলকভাবে বৃহত্তর এলাকা যার মূখ্য উদ্দেশ্য জনসাধারণকে শিক্ষা, গবেষণা ও বিনোদন প্রদান করা।
  • উদ্ভিদ উদ্যান: যে এলাকায় দেশি বিদেশী উদ্ভিদ প্রজাতিগুলোকে সংরক্ষণ করা হয় অথবা তাদের অন্য আবাসস্থল থেকে নিয়ে এসে শিক্ষা ও গবেষণা, এবং জিনপুল উৎস সংরক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হয়।
  • সাফারী পার্ক: যেখানে দেশী-বিদেশী বন্যপ্রাণিসমূহ ন্যূনতম প্রাকৃতিক পরিবেশে থেকে বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পায় এবং উন্মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করে।
  • রক্ষিত এলাকা: সরকার ঘোষিত সকল অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান ,কমিউনিটি কনজারভেশন এলাকা, সাফারি পার্ক, ইকোপার্ক, উদ্ভিদ উদ্যান, বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা, জাতীয় ঐতিহ্য ও কুঞ্জবন – এই সবগুলোই একেকটি রক্ষিত এলাকা।
  • কোর জোন: রক্ষিত এলাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন এলাকা যা জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ, যেখানে বন্যপ্রাণীরা নির্দ্বিধায় বংশবৃদ্ধি করতে পারবে এবং পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ বা সীমিত এবং সেখানকার বনজ দ্রব্য ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
  • বাফার জোন: বাফার জোন হচ্ছে রক্ষিত এলাকার প্রান্তসীমানায় অবস্থিত এমন বনভূমি বা অবক্ষয়প্রাপ্ত বন যা কোর জোন এর বাইরে, যেখানকার পাশ্ববর্তী স্থানীয় জনগণের ওই এলাকা থেকে নিজ প্রয়োজনে বনজ দ্রব্য আহরণের প্রবণতা আছে। রক্ষিত এলাকার উদ্ভিদ প্রজাতির সাথে মিল রেখে এখানে স্বল্প মেয়াদী অংশীদায়িত্ব বনায়নের সুযোগ রয়েছে।
  • ল্যান্ডস্কেপ জোন: ল্যান্ডস্কেপ জোন হচ্ছে কোনো স্বীকৃত অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান ও ইকোপার্ক এর বাইরে কোন নির্দিষ্ট এলাকা যা রক্ষিত এলাকার জীববৈচিত্র্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্ষিত এলাকার অবক্ষয়রোধে রক্ষিত এলাকার প্রাকৃতিক ভূ-দৃশ্যের সাথে মিল রেখে যার ব্যবস্থাপনা করা হয়। এখানে বন্যপ্রাণীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা হয়েছে।
  • বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র: সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কেন্দ্র যেখানে বিরল, বিপন্ন বা মহাবিপদাপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী আটক বা উদ্ধার করে পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে তাদের বংশবৃদ্ধি করা হয়।
  • আবদ্ধ প্রাণী: বন্দী বন্যপ্রাণী যারা বন্দী অবস্থায় বাচ্চার জন্ম দেয়।
  • শিকার: নিম্নলিখিত কর্মকাণ্ড গুলোকে শিকার বলে অভিহিত করা হয় –
    • কোনো বন্যপ্রাণিকে ধরা, বিষ প্রয়োগ করা, হত্যা করা বা এসব করার উদ্যোগ নেওয়া, অথবা এসব করার উদ্দেশ্যে কোনো বন্যপ্রাণিকে তাড়া করা।
    • কোনো বন্যপ্রাণিকে আহত বা ক্ষতি করা, বন্যপ্রাণির কোনো অংশ নিয়ে যাওয়া অথবা বন্য পাখি বা সরীসৃপের বাসা বা ডিম সংগ্রহ করা, বা ধ্বংস করা।
  • ট্রফি: কোনো মৃত বা আবদ্ধ বন্যপ্রাণি বা তার অংশবিশেষকে পরিশোধন বা প্রক্রিয়াজাত করে স্বাভাবিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়। যেমনঃ চামড়া, পশমের মোটা চাদর, বন্যপ্রাণির ট্যাক্সিডার্মি করা অংশ, হরিণের শাখাযুক্ত শিং ও হাড়, কচ্ছপের শক্ত খোলস, শামুক ঝিনুকের খোল, হাতির দাঁত, মৌচাক, পাখির পালক, বিভিন্ন প্রাণির ডিম ইত্যাদি।
  • অসম্পূর্ণ ট্রফি: যখন কোন মৃত বা আবদ্ধ বন্যপ্রাণী বা তার অংশবিশেষ যা পরিশোধন বা প্রক্রিয়াজাত করা হয় নাই এবং সেই বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • পরিযায়ী প্রজাতি: পরিযায়ী প্রজাতি বলতে সে সকল বন্যপ্রাণীকে বোঝানো হয় যারা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে আসা-যাওয়া করে।
  • করিডোর: বন্যপ্রাণির চলাচলের বিশেষ পথ যা দিয়ে বন্যপ্রাণীরা এক বনাঞ্চল থেকে অন্য বনাঞ্চলে নির্দ্বিধায় চলাচল করতে পারে।
  • ফ্লাইওয়ে: ফ্লাইওয়ে হলো আকাশপথে চলাচলের নির্দিষ্ট কোনো পথ যা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পাখিরা তাদের পরিযায়নের সময় ব্যবহার করে। সাধারণত পরিযায়ী পাখিরা প্রজনন স্থল থেকে তাদের শীতকালীন আবাসে যাতায়াত তথা পরিযায়ন করতে ফ্লাইওয়ে ব্যবহার করে।   
  • সহ-ব্যবস্থাপনা: কোনো এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ঐক্যমতের ভিত্তিতে উক্ত সম্পদের পরিচালনা বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সকল পক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
  • জীববৈচিত্র্য: জীব বৈচিত্র্য হচ্ছে পৃথিবীতে বাসকারী জলজ, স্থলজ ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে বসবাসকারী সকল জীবের বিভিন্ন প্রজাতি ও উপ-প্রজাতির জেনেটিক ও প্রজাতিগত ভিন্নতা অথবা তাদের বাস্তুতন্ত্রের ভিন্নতা।
  • কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি : ১৯৯২ সালের একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যার মূল লক্ষ্য হলো জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা, তার উপাদানসমূহের টেকসই ব্যবহার ও সেখান থেকে প্রাপ্ত সম্পদের সুষ্ঠু ও সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা।
  • স্মারক বৃক্ষ: সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও প্রথাগত মূল্য রয়েছে এমন ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষ বা পুরান বয়স্ক দেশীয় উদ্ভিদ বা শতবর্ষী বৃক্ষ।
  • পবিত্র বৃক্ষ: কোনো ধর্ম ও গোত্রের জনগোষ্ঠীর নিকট ধর্মীয় পবিত্র উদ্ভিদ হিসেবে স্বীকৃত কোনো বৃক্ষ।
  • ভারমিন: যে সকল প্রাণী কৃষি ফসলের ক্ষতিসাধন করে।
  • বাস্তুতন্ত্র: একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসকারী জীবসমূহের পরস্পরের সাথে এবং ঐ অঞ্চলের জৈব, অজৈব উপাদানগুলোর সাথে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার (Interaction) মাধ্যমে গড়ে ওঠা অনুকূল জীবনধারা।
  • factory replica watches
  • We mainly deal swiss replica watches with reasonable price. Hublot, Omega, Breitling, Cartier, Panerai, Rolex Daytona, Audemars Piguet replica watches.
  • The top-rated replica watches uk shops for men and women. Cheap fake Rolex watches are hot sale.